সুস্থতায় কালোজিরা ও মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম

 কালোজিরা ও মধু একসাথে খাওয়ার ফলে শরীরের অ্যান্টিবডি  তৈরি হয় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় দেহকে নানা রকম রোগের হাত থেকে রক্ষা করে দেহকে রাখে সুস্থ ও প্রফুল্ল। সুস্থ থাকলে কর্মের স্পীহা জন্মে। মনভালো থাকে কাজে মন বসে।

কালোজিরা রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টোবায়োটিক যা মৃত্যু ছাড়া সকল রোগরে সমাধান। কিভাবে কখন এই কালোজিরা মিশ্রন খেতে হবে। খেলে কি উপকার পাওয়া যাবে তা নিয়ে আজকের আলোচনা।

পোস্ট সূচিপত্র

কালোজিরায় কি কি উপাদান রয়েছে
কালোজিরাতে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান । এতে প্রায় ১৫ প্রকার অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। পুষ্টি উপাদানগুলো মানব শরীরে বাহ্যিক হতে ভেতরে উভয় জায়গায় কার্যকর। উপাদানগুলো হলো-
১ গ্রাম কালোজিরায় রয়েছে-
  • শর্করা = ৩৮%
  •  চর্বি ও স্নেহ = ৩৫%
  • আমিষ = ২১% (২০৮ মাইক্রোগ্রাম)
  • আয়রন (Fe) = ১০৫ মাইক্রোগ্রাম
  • জিংক(Zn) = ৬০ মাইক্রোগ্রাম
  • নিয়াসিন = ৫৭ মাইক্রোগ্রাম
  • কপার  = ১৮ মাইক্রোগ্রাম
  • ভিটামিন বি১ = ১৫ মাইক্রোগ্রাম
  • ফসফরাস = ৫.২৬ মাইক্রোগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম = ১.৮৫ মাইক্রোগ্রাম
  • ফোলাসিন = ৬১০ আইউ
  • ভিটামিন এ 
  • ভিটামিন বি
  • ভিটামিন সি
  • ভিটামিন বি২
  • লিনোলিক
  • স্টিয়ারিক এসিড
  • অলিক এসিড 
  • গ্লুটামিক এসিড
  • নিজেলোন 
  • নিজেলিন
  • সেলেনিয়াম 
  • ফসফেট
  • ফসফরাস
মধুতে কি কি উপাদান রয়েছে 
মধুতে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান ।
  • ফুক্টোজ = ৩৪-৩৭%
  • গ্লুকোজ = ২৫-৩৭%
  • মল্টোজ = ৫-১২%
  • সুক্রোজ = ০.৫-৩%
  • খনিজ লবণ = ২৮%
  • অ্যামাইনো এসিড = ২২%
  • এনজাইম = ১১%
  • ভিটামিন বি১ 
  • ভিটামিন বি২
  • ভিটামিন বি৩ 
  • ভিটামিন বি৫
  • ভিটামিন বি৬
  • আয়োডিন 
  • জিংক
  • কপার 
  • অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল 
  • অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল
কালোজিরা ও মধু খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
কালোজিরা হলো সকল রোগের মহাঔষধ। আর মধু হলো প্রকৃতির সবচেয়ে বিশুদ্ধ তরল। কালোজিরা ও মধু যখন একসাথে মেশানো হয় তখন তার পুষ্টি উপাদান বহুগুনে বেড়ে যায়। আমাদের শরীর ও হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য যেই রাসায়নিক উপাদান গুলো অত্যাবশকীয় তার সবগুলোই কালোজিরা ও মধুর মধ্যে পাওয়া যায়। 
 
শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা যে কোন রোগের জন্য ঢাল হিসেবে কাজ করে। কালোজিরা অল্প কিছু দানা হাতের তালুতে নিয়ে তার মধ্যে এক চামচ পরিমান মধু মিশিয়ে প্রতিদিন খেলে-শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গের জন্য এন্টিডট হিসেবে কাজ করবে। শরীরকে রাখবে সতেজ ও প্রাণবন্ত। হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে যার ফলে পাকস্থলী পরিষ্কার থাকবে। মাথা হতে পায়ের তালু পর্যন্ত বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ কোষ ও টিস্যুর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

প্রতিদিন সকালে কালোজিরা ও মধু খেলে কি হয়
সকালে খালি পেটে কালোজিরা ও মধুর মিশ্রন পাকস্থলির জন্য টনিক হিসেবে কাজ করে। অল্প সংখ্যক কলোজিরার দানা বা কয়েক ফোঁটা কালোজিরার তৈল ও এক চামচ পরিমান মধু একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন খালি পেটে খেলে পাকস্থলির হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়ে এবং পেট পরিষ্কার থাকে। কালোজিরা ও মধুর মধ্যে যে রাসায়নিক উপাদান রয়েছে তা সহজে পরিপাক যোগ্য । 

সর্দি কাশির চিকিৎসায় কালোজিরা ও মধুর ব্যবহার
সর্দি কাশি মানব শরীরের জন্য কমন সমস্যা। একটু ঠান্ডা বা গরম লাগলেই এই সমস্য দেখা দেয়। ঘরোয়া উপায়ে এই সমস্যা সমাধানের একটি উপায় হলো কালোজিরা ও মধুর ব্যবহার। কালোজিরা হাতের তালুতে ডলে একটি ছোট পুটলিতে বেঁধে নাকের কাছে নিয়ে আস্তে আস্তে শ্বাস নিতে থাকলে এর মধ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদান কারনে সর্দি-কাশি থেকে উপশম পাওয়া যায়।

কালোজিরা ও তেল হালকা গরম করে বুকে মালিশ করলে সর্দি-কাশি থেকে উপশম পাওয়া যায়। 
হালকা গরম পানির মধ্যে কয়েক ফোঁটা কালোজিরার তৈল ও মধু মিশেয়ে খেলে ও ভালো উপশম পাওয়া যায়। এই উপাদান গুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।

ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রনে কালোজিরা ও মধু
ডায়েবেটিস বা বহুমূত্র রোগ যেকোন শ্রেণি পেশার মানুষের হতে পারে। রক্তে সুক্রোজ বা চিনির পরিমান বেড়ে গেলে ডায়েবেটিস রোগের লক্ষন দেখা দেয়। কালোজিরা খাবারের সাথে যেমন, কালোজিরার ভর্তা বা খাবার রান্না করার সময় কয়েক ফোঁটা কালোজিরার তেল যোগ করলে রক্তে সুগারের পরিমান হ্রাস করে। সুগার নিয়ন্ত্রনে থাকলে ডায়েবেটিস ও নিয়ন্ত্রন থাকবে।

মানবদেহে দুই ধরনের কোলেস্টেরল থাকে- ১) এইচ ডি এল (HDL)  ২) এল ডি এল (LDL)
ডায়েবেটিস রোগ এইচ ডি এল বা ভালো কোলেস্টরলকে কমিয়ে দেয় এবং এল ডি এল বা খারাপ কোলেস্টেরলকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু নিয়মিত কেউ যদি খাবার বা অন্য কোন উপায়ে কালোজিরা ও মধু খায় তাহলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন থাকে। টি এর সাথে কয়েক ফোঁটা করে কালোজিরার তেল মিশিয়ে পান করেলে ডায়েবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে।

উচ্চরক্তচাপ হ্রাস করতে কালোজিরা ও মধু
সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক চাপের মান বেড়ে গেলে উচ্চরক্তচাপের সৃষ্টি হয়। হাইপারটেশন কমাতে কলোজিরা সাহায্য করে। পানি হালকা গরম করে তার মধ্যে কয়েক ফোঁটা কালোজিরা তেল যোগ করে পান করলে উচ্চরক্তচাপ হ্রাস পায়। হার্ট  সুস্থ ও ভালো থাকে। এছাড়াও যে খাবার গুলো উচ্চরক্তচাপের কারণ যেগুলো পরিহার করলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রন থাকে।

উচ্চরক্তচাপ হ্রাসের উপায়-
১। গরম পানি + কালোজিরার তেল প্রতিদিন পান করুন। 
২। গরম ভাত বা অন্য যেকোন খাবার যে খাবারের সাথে কালোজিরা মিশিয়ে খাওয়া যায়।
৩। কালোজিরা + নিমের পাতার রস + রসুনের রস মিশিয়ে সপ্তাহে ২ বা ১ বার মাথায় দিলে মাথা ঠান্ডা থাকে।

যৌন ক্ষমতা বাড়াতে কালোজিরা ও মধু
পুরষের স্পার্ম সংখ্যা হ্রাস পেলে যৌন ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায় । যৌন শক্তি হ্রাস পাওয়ার ফলে মিলনের সক্ষমতা কমে যায় স্ত্রীকে খুশি করতে পারে না। স্ত্রীকে খুশি করার জন্য ভায়াগ্রা জাতীয় ঔষধ সেবন করতে হয়ে। সেট ক্ষনস্থায়ী সুখ দিলেও এর পাশ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক। কালোজিরা ও মধুর মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতির বিস্ময়কর শক্তি । 

যৌন ক্ষমতা বাড়ানের জন্য- ১। খাঁটি মধু ২। কালোজিরার তেল ৩। অলিভ অয়েল ৪। হেলেঞ্চা বা হিংচার রস। এই মিশ্রণ গুলো নির্দিষ্ট পরিমান মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে কালোজিরা ও মধু
বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। অতিরিক্ত চিন্তা, ক্রোধ, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, আমিষ জাতীয় খাবার স্মৃতিশক্তি হ্রাস ঘটায়। কালোজিরার ও মধুর মধ্যে থাকা রাসায়নিক উপাদান শরীরের সব রকম ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। কালোজিরার তেল মাথায় সপ্তাহে ২ বা ৩ দিন ভালোভাবে মালিশ করল মাথা ঠান্ডা থাকে। মাথা ঠান্ডা থাকলে স্মৃতিশক্তি উন্নতি ঘটে।

অ্যাজমা ও হাঁপানি রোগের চিকিৎসায় কালোজিরা ও মধু
অ্যাজমা বা হাঁপানি ফুসফুস জাতীয় রোগ। ঠান্ডা, ধূলাবালি, যেসব খাবারে অ্যালার্জি  রয়েছে উক্ত খাবার গুলো অ্যাজমা ও হাঁপানির কারণ। কালোজিরা ও মধুর মিশ্রনে থাকা ঔষধি গুন যা হার্ট ও ফুসফুস ভালো রাখে। শরীরকে উঞ্চ রাখে ফলে ঠান্ডা জাতীয় রোগ থেকে আরগ্য লাভ হয়।

শিশুদের মস্তিক বিকাশে কালোজিরা ও মধু
মস্তিষ্ক বিকাশের উপযুক্ত সময় হলো শৈশব। শৈশবে শিশুর সুস্থতা মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। কালোজিরা ও মধুকে সুপার ফুড বলা হয়। এটি প্রাকৃতিক বা অর্গানিক ফুড, পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। শিশুকে প্রতিদিন কয়েক ফোঁটা করে মধু খাওয়ানের অভ্যাস করতে হবে এবং পুরো শরীরে কালোজিরার তেল হালকা গরম করে ভালোভাবে মালিশ করতে হবে।

হাঁটু ও পিঠের ব্যাথায় কালোজিরা ও মধু
বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়ের ক্ষয় হতে থাকে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলেও শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট, মেরুদন্ডে ব্যাথা অনুভূত হয়। প্রাচীনকাল থেকেই কালোজিরা ও মধুকে মহাঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কালোজিরা ও মধু শরীরের ক্যারসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। কালোজিরার তেল গরম করে হাঁটু ও পিঠে ভালোভাবে মালিশ কররে ব্যথা থেকে উপশম পাওয়া যায়।

গলাব্যাথায় কালোজিরা ও মধু
গলাব্যাথা হলো ঠান্ডা জাতীয় সমস্যা। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url